দি লাঞ্চ অন

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০৪:৩২ , আপডেট: ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০৪:৫৫

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


– সামারসেট মম 

( পৃথিবীখ্যাত এই ছোট গল্পটির অনুবাদ করেছেন, এম,ডি ম্যাক্স সি,বি,এন পাঠকদের জন্যে)।

থিয়েটার চলাকালীন বিরতির সময়ে আমি তাকে এক পলক দেখলাম,তাকে যখন শেষবারের মত দেখেছিলাম তা অনেকদিন আগের কথা।
কেউ তার নাম না বললে তাকে আমার চিনতে কষ্ট হত। আমার সাথে কি চমৎকার ভাবে যে পরিচয় হয়েছে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা!
আজ অনেকদিন পর আবারো দেখা, সময় কত দ্রুতই না ফুরিয়ে যায়। আমরা সকলেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।

‘ তোমার কি মনে আছে যখন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা, লাঞ্চ করাতে বলেছিলে’ ?
তাই নাকি?
আজ থেকে বিশ বছর আগে আমি প্যারিসে থাকতাম, একটি সেমিটারির পাশ দিয়ে ছোট এক কোয়াটার ছিল আমার। কোন প্রকারে কষ্টার্জিত রুজিতে দিন চলত আমার। সে আমার একটি বই পড়ে আমাকে এই ব্যাপারে চিঠি লিখল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে উত্তর পাঠালাম, তার পরবর্তী চিঠিতে সে জানাল যে, সে প্যারিস অতিক্রম করে যাচ্ছে, আমার সাথে কথা বলতে চায়, কিন্তু তার হাতে সময় খুবই অল্প, এই বিষুদবার সে সময় দিতে পারবে, সকালে লুক্সেমবার্গ থাকবে, যদি ফয়েটসে লাঞ্চ করালে সে পুলকিত হবে।

ফয়েটস ফ্রান্সের দামী একটি রেস্তরা যেখানে ফ্রেঞ্চ সিনেটররা মধ্যাহ্নভোজনে যান , সেখানে যাওয়ার কথা আমি কল্পনায় আনতে পারিনা।
কিন্তু আমি পুলক অনুভব করলাম । আর আমি এতই যে ছোট ছিলাম একটি মেয়েকে প্রত্যাখ্যান করার মত দীক্ষা অর্জন করতে তখনো পারিনি’।

পকেটে ছিল ৮০ ফ্রাংক যা একমাসের খরচ, যদি একটি ভাল লাঞ্চে ১৫ ফ্রাংক খরচ হয়,আর দুই সপ্তাহ কফি না খেয়ে থাকতে পারি তাহলে চলতি মাস কোন রকমে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
তাকে জানালাম ঐ দিনেই আমি সারে বারোটায় তার সাথে দেখা করব। তাকে যতটা তরুণী ভেবেছিলাম তা নয়, তার অবয়ব বেশি চোখে পরে, কিন্তু নেই কোন আকর্ষন।

আসলে সে ছিল চল্লিশ বছরের এক মহিলা, তার এই বড় বড় আর সাদা দাঁত যা কোন বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয় বলে মনে হল আমার কাছে।

খুবই বাঁচাল প্রকৃতির, আমার ব্যাপারে বলার আগ্রহ দেখিয়েছিল বলে আমি শুধু শুনেই যাব সিদ্ধান্ত নিলাম।
যখন মেন্যু আসল, দাম দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম, আমি যা ধারনা করেছিলাম তার চেয়েও অনেক বেশী। কিন্তু সে আমাকে আশ্বস্ত করল এই বলে যে, সে লাঞ্চের সময়ে তেমন কিছু খায়না।

আমি আন্তরিক ভাবে বললাম, – তা কি হয় ।‘ আমি একটি আইটেমের চেয়েও বেশি লাঞ্চে খাইনা, আজকাল মানুষ এত কিভাবে খেতে পারে!’- বলল সে।

এই সামান্য মাছ হলে হয়,যদি তাদের স্যালমন থাকে ! তখন ছিল বছরের শুরু, মেনুতে নেই তারপরেও আমি জিজ্ঞেস করলাম আছে কিনা? ওয়েটার বলল, এই মাত্র চমৎকার একটি স্যালমন এসেছে প্রথমবারের মত। আমি আমার অতিথির জন্যে অর্ডার দিলাম।
ওয়েটার তাকে জিজ্ঞেস করল রান্না হতে হতে আর কিছু দরকার আছে কিনা? না,আমি তেমন খাইনা,শুধুমাত্র ক্যাভিয়ার থাকলে চলে, ক্যাভিয়ার হলে মন্দ হবেনা।

আমার একটু হৃদস্পন্দন হল, আমি জানি যে আমার ক্যাভিয়ারের টাকা নেই,কিন্তু তাই বলে তাকেও বলা যাচ্ছেনা। তারপরেও ওয়েটারকে বললাম ঠিক আছে, নিয়ে আস।

আর নিজের জন্যে মেনুর সবচেয়ে সস্তা খাবার মাটন চপ পছন্দ করলাম।

আমার মনে হয়, তোমার মাংস খাওয়া উচিত নয়, সে বলল, চপ খাওয়ার পরে তুমি কাজ কিভাবে করবে? পেটে বেশী কিছু দেওয়া ভালনা।
পানীয় এর প্রসংগ আসল, সে বলল আমি লাঞ্চের সময় পানীয় নিই না ।  আমি বললাম- আমি ও তাই।
শুধুমাত্র সাদা মদ ছাড়া,-এমন ভাবে বলল যা আমার কথা সে শুনেনি । এই ফ্রেঞ্চ মদ খুবই হালকা, হজমে খুবই ভাল। তারপরেও আতিথেয়তার খাতিরে আমি বলেই চললাম তুমি কি নিবে?
তার সাদা দাতের এক পলক ঝলকানি দিল,আর বলল ,- আমার ডাক্তার শ্যাম্পেন ব্যতিরেকে কিছু না খেতে বলল।

মনে হয় আমার চেহারা ফ্যাকাসে হল,আধা বোতল অর্ডার দিলাম, বললাম যে আর ডাক্তার আমাকে শ্যাম্পেন না নিতে বলেছেন, তাহলে তুমি কি পান করবে? –  পানি।
সে ক্যাভিয়ার, শ্যালমন খেয়েই চলল, আর শিল্প ও সাহিত্যের কথা বলতে লাগল, আর আমার মাথায় বিল কত আসবে তার ভয়।

আমার মাটন চপ যখন চলে আসল সে বলল,তুমি ত দেখি খুব খেতে পার! তা কিন্তু ভুল করছ, তুমি আমার মত কম খাওনা কেন? দেখবে অনেক ভাল লাগবে। বিল আসতে আসতেই বললাম আমি কমই খাব।

আর ওয়াটারের দিকে কিঞ্চিত তাকিয়ে বলল, কম খাওয়াই ভাল, নামে মাত্র খাওয়া আর কি! আসলে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে খেতে হয়ত, যাক প্যারিসে যখন আসলাম ওই যে এসপ্যারাগাস দেখা যাচ্ছে তা না খেলে দুঃখ থেকে যাবে।

আমার হৃদয় কেপে উঠল, আমি এসব যে কত দামী তা জানি, এগুলো দেখলে আমার জিহবাই লালা চলে আসত। ওয়েটার কে জিজ্ঞেস করলাম যে,ম্যাডাম জানতে চাচ্ছে এসব আছে কিনা? খুব চেষ্টা করেছিলাম তাকে না বলাতে, মুখে হাসি নিয়েই বলে ফেলল, তাদের কাছে ইয়া বড় বড় , চমৎকার এসপ্যারাগাস আছে, বললাম,আমার ক্ষিধে নেই,তুমি চাইলে খেতে পার। অর্ডার করলাম।
তুমি কি খাবেনা? আমি এইসব খাইনা,বললাম তাকে।
হ্যা,অনেকেই খায়না,তুমি যে মাংস নিয়ে তোমার প্লেট নষ্ট করে ফেলেছ।
এসপ্যারাগাস রান্না চলছে আর আমি আতংকে,এই কারনে যে, এই টাকা দিয়ে বাকী মাস কিভাবে চলব তা নয়, বরঞ্চ বিল কত আসবে তা নিয়ে, আমার যদি ১০ ফ্রাংক কম থাকে তাহলে আমার অতিথির কাছ থেকে চাওয়া এক ভয়ংকর ব্যাপার।
এটি আমি চিন্তাই করতে পারিনা, একটি প্লান করলাম, আমার যা আছে তার চেয়েও যদি বিল বেশী আসে তাহলে আমি পকেটে হাত দিয়ে নাটকীয় ভংগিমায় বলব যে, আমার পকেট মার হয়েছে, কিন্তু আমার অতিথির কাছেও যদি যথেষ্ট না থাকে? তাই এই চিন্তা বাদ দিলাম, তাই একটি উপায় ভাবলাম ,তাহল, আমার হাতঘড়ি বন্ধক দেওয়া এবং বিল পরিশোধ করে পরে এসে নেওয়া।

এসপারাগাস আসল,দেখতে বড়,দৃষ্টিনন্দন এই যেন রসনাবিলাস।

বাটারের সৌগন্ধ আমার নাকে এসে পরছে, আর আমি যেন সেমিটিক ধর্মযাজকের অকপট স্বাক্ষী।

দেখতে লাগলাম এই নিষিদ্ধ রমনী কিভাবে গলার ভেতরে তার বিশাল বিলাসী মুখগহ্বরে তা ঢুকাচ্ছে।

আর আমি অত্যন্ত ভদ্র ভাবে বলকান অধ্যায়ের ভাষন দিয়ে চললাম,অবশেষে সারা হল তার।

বললাম, কফি?
হ্যা,সাথে আইসক্রিম সে জানাল।
ভাবলাম এই যাত্রায় বাচলাম আপাতত, সাথে আমার জন্যে কফিও অর্ডার দিলাম, আইসক্রিম খেতে খেতে সে বলল, কম খাবার খাওয়া ভাল সবার এই ধারনা থাকা উচিৎ ,আমি মনে করি।

জিজ্ঞেস করলাম,তোমার এখনো কি ক্ষিধে আছে? আর না,আমি শুধুমাত্র সকালে কফি আর রাত্রে ডিনার সারি,লাঞ্চ তেমন করিনা, আমি তোমার কথাই বলছিলাম,
ও আচ্ছা তাই!

এরপর একটি ভয়ংকর ব্যাপার ঘটে গেল, আমরা যখন কফির অপেক্ষা তখন হেড ওয়েটার তোষামোদী হাসি নিয়ে পুরু এক বাস্কেট পিচ ফল নিয়ে আসল, এ যেন কুমারী মেয়ের লাজুকলতা, এ যেন ইতালীয় সবুজ অরণ্য, এখন ত পিচ ফলের সিজন নয়,খোদা’ই জানে দাম কত আসবে!

আমি জানতে পারব তা কিছুক্ষণ পরে, কেননা আলাপচারীতার মাঝেই আমার অতিথি অবচেতন মনে একটি নিয়ে ফেলল।
দেখ এবার, মাংস খেয়ে তোমার পেট নষ্ট করেছ,আমি মাত্র স্ন্যাক নিলাম তাই পিচ খেলে ভাল হয় আমার জন্যে।
বিল আসল, পরিশোধ করার পর দেখলাম টিপস দেওয়ার জন্যেও তেমন টাকা আমার কাছে নেই, ওয়েটার কে মাত্র ৩ ফ্রাংক দিলাম তা সে দেখল,আমাকে দূর্বল ভাবল, কিন্তু রেস্তরা থেকে বের হওয়ার পর আমার সামনে পুরু এক মাস আর আমার পকেট খালি।

The writer is the English correspondent of Coxsbazarnews.com

আমাকে ফলো করবে,আর লাঞ্চে একটি আইটেমের চেয়েও বেশী খাবেনা,যেতে যেতেই সে বলতে লাগল।
আরে তা ত বটে, আমি আজ রাতে ডিনারই করবনা।
‘ মজার মানুষ’,ক্যাবে উঠার সময়ে বলল,আসলেই মজার মানুষ তুমি।
কিন্তু আমার প্রতিশোধ ঠিকই নেওয়া হয়েছে, যদিও আমার মনে হয়না আমি প্রতিশোধ পরায়ণ মানুষ, কিন্তু অমর ঈশ্বর যদি নিজ দায়িত্ব থেকেই তার ব্যাবস্থা নেন,তাহলে আত্মপ্রসাদে তা উপভোগ করা যায়। আজ তার ওজন হয়েছে ২১ স্টোন।
( ১৪ পাউন্ডে ১ স্টোন)।